স্বাস্থ্য কথা

ব্যাথা আসলে কেউই চায় না। কিন্তু জীবনে ব্যাথ্যা অনুভব করে নি, এমন বোধ হয় কাউকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর। শরীরে কোথাও কোন গন্ডগোল বাঁধলেই আমরা সাধারনত ব্যাথা অনুভব করি বা বলা যায় শরীরে কোন সমস্যা দেখা দিলে শরীর তা ব্যাথার মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দেয়। কিছু কিছু ব্যাথা আছে যা চোট পাওয়া থেকে হতে পারে, কেটে গেলে, পুড়ে গেলে হতে পারে। যা সাময়িক এবং অল্পতে সেরে যায়। এছাড়া যেসব ব্যাথা শরীরের ভিতর থেকে উৎপন্ন হয়ে অনেক্ষন এমনকি একদিন/দুইদিন স্থায়ী হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে উদাসিন হওয়া একদম ঠিক নয়। এসব ব্যাথার যদি কোন কারন খুঁজে না পান কিংবা কেন হচ্ছে বুঝতে না পারেন, তবে অবশ্যই নিকটস্থ ডাক্তার কিংবা কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
১। তীব্র মাথা ব্যাথা
তীব্র মাথা ব্যাথা অবহেলা করবেন না। “আপনার যদি ঠান্ডা লাগে আর তীব্র মাথা ব্যাথা হয়, তাহলে সাধারনভাবে ধরে নিতে হবে সাইনাসের সমস্যা। কিন্তু দীর্ঘক্ষন স্থায়ী হলে, এটা হতে পারে মস্তিষ্কেররক্তক্ষরন কিংবা হতে পারে মস্তিষ্কের টিউমার। তাই যে কোন ব্যাথা যদি আপনি নিশ্চিত না হন, তবে অবশ্যই মেডিকেল চেক-আপ করিয়ে নিন” – কথাগুলো বলেন সান্দ্রা ফ্রাইহফার যিনি আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ানের মুখপাত্র। “যদি কেউ বলেন যে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে মাথা ব্যাথা এবং সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বয়ে বেড়াচ্ছি, তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে আমরা বলতে পারি ‘ব্রেইন এ্যানিউরিজম’। যতশীঘ্র সম্ভব চেক-আপ করান” – বলেছেন আমেরিকান জেরিয়াট্রিক সোসাইটির মুখপাত্র শ্যারন ব্র্যাংম্যান।
২। বুকে, গলায়, চোয়ালে, কাঁধে, বাহুতে বা পেটে ব্যাথা
বুকে ব্যাথা – হতে পারে নিউমোনিয়ার কারনে আবার হার্ট এটাকের কারনে। তবে মনে রাখবেন, যদি খারাপ লাগে বা অস্বস্তি লাগে তাহলে দেরী করবেন না। বুকের ভিতর কেমন কেমন করে, অস্বস্থি বোধ হৃদরোগের লক্ষন। হৃদরোগীরা বুকের ভিতর চাপ অনুভব করেন। অনেকে বুকে হাত দিয়ে বলেন, মনে হয় আমার বুকে যেন হাতী বসে আছে। আস্তে আস্তে এই ব্যাথা বুকের উপরের দিকে, গলা, চোয়াল, বাম কাঁধ ও হাত অথবা পেটের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো বমি বমিও লাগতে পারে।
“আমি খুব বেশি চিন্তিত হই না যদি দেখি রোগীর বয়স ১৮ বছরের মত। কিন্তু এমন কেউ যদি উপরের কথাগুলো বলেন এবং তার জানা আছে তিনি ঝুঁকিপূর্ন, তার এরকম পুনঃপুন ব্যাথার ভাব আছে, তাহলে কোনক্রমেই তার দেরী করা উচিত হবে না” – জেরোম কোহেন বলেন। তিনি আরো বলেন যে, থেমে থেমে ব্যাথা খুব সিরিয়াসলি নেয়া উচিত। উত্তেজনার কারনে, অবেগ-আপ্লুত হওয়ার কারনে কিংবা অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে এধরনের ব্যাথা অনুভবকরতে পারেন - এটাও একটা ধরন। যেমন ধরুন আপনি বাগানে কাজ করতে গিয়ে এধরনের ব্যাথা অনুভব করছেন, কিন্তু একটু বসার পর কিংবা বিশ্রামের পর দেখলেন ব্যাথা আর নেই – এটা একধরনের এনজাইনা। এটা সাধারনত অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরমে বেশি হতে পারে।
“মহিলাদের ক্ষেত্রে এধরনের অস্বস্তি ভাবটা অনেক সময় উহ্য থাকে” – কোহেন বলেন যিনি সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের প্রিভেনটিভ কার্ডিওলোজির পরিচালক। অনেকেই এটাকে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিজঅর্ডারের সাথে গুলিয়ে ফেলেন যেমন বুক জ্বালা-পোড়া, পেটের অস্বস্তিভাব ইত্যাদি। “অনেক সময় অতিরিক্ত ক্লান্তির মত মনে হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের মেনোপজ শুরুর পর নাটকীয়ভাবে হৃদরোগ বেড়ে যেতে পারে। তখন এটি অনেক মহিলার মৃত্যুর কারন হয়ে দেখা দেয় যা পুরুষদের হৃদরোগে মৃত্যুর তুলনায় বেশি। অবশ্য হৃদরোগে মৃত্যুর হার যেকোন বয়সে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের অনেক বেশি। তবে এই বয়সে যদি হৃদরোগের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে ডাক্তারের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে” – কোহেন বলেন।
৩। ব্যাথা যখন দুই কাধের মাঝে বা পিঠের নীচের দিকে
ব্র্যাংম্যান এর মতে, যদি এরকম স্থানে ব্যাথা দেখা দেয় বা থাকে, তাহলে এটা হতে পারে আর্থ্রাইটিস। অন্যান্য সম্ভাব্য লক্ষণের মধ্যে হতে পারে এটি হার্ট এ্যাটাক অথবা কোন এ্যাবডোমিনাল প্রবলেম। একটা হতে পারে তা’ হল এ্যায়োর্টিক ডিসেকশন বা ধমনীর দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, যা হঠাৎ ব্যাথা বা সূচ ফোঁটানোর মত করে তীব্র ব্যাথার আকারে দেখা দিতে পারে। যারা এধরনের ঝুঁকিপূর্ণ রোগে আক্রান্ত তাদের জরুরীভিত্তিতে ধমনী বা শিরার দেয়ালের ক্ষত নিরাময় করা দরকার। উচ্চ রক্তচাপজনিত কারনে এরকম হতে পারে অথবা যদি রোগীর রক্ত প্রবাহে কোন সমস্যার ইতিহাস থাকে, তাহলেও হতে পারে। আবার ধুমপান এবং ডায়াবেটিসের কারনেও হতে পারে – বলছিলেন ব্র্যাংম্যান।
৪। তীব্র পেটের ব্যাথা
আপনার কি এ্যাপেনডিক্সের সমস্যা আছে? অবহেলা করবেন না, কারন যেকোন সময় বড়ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এতে উদর-গহবরে দেয়াল ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। তীব্র ব্যাথার কারন হতে পারে গল ব্লাডার কিংবা প্যানক্রিয়াটিসের সমস্যা, পাকস্থলীর ক্ষত বা ক্ষুদ্রান্ত্রের ব্লক ইত্যাদি। তবে যে কারনেই হোক, দরকার জরুরী ব্যবস্থা গ্রহন।
৫। পায়ের হাঁটু বা নীচের অংশে ব্যাথা ও ফুলে যাওয়া
Deep Vein Thrombosis (DVT)  আমরা সচারচর এই বিপদের কথা জানিন না বা কম জানি। এটা পায়ের প্রধান শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে গেলে ডিভিটি দেখা দেয়। প্রতি বছর প্রায় দুই লাখের মত আমেরিকান এই সমস্যায় ভোগেন। আমাদের দেশের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রচুর রোগী এধরনের সমস্যায় ভগেন। এটিও জীবন হরনকারী মারাত্মক রোগ। এতে যা হয় তা হল, জমাট কোন রক্তের টুকরা হয়তো ফুসফুসে চলে যেতে পারে এবং পালমোনারি এমবোলিজম দেখা দিতে পারে – যা খুবই মারাত্মক – ফ্রাইহোফার বলেন। এই ঝুঁকির কারন সমূহের মধ্যে আছে ক্যানসার, স্থুলতা, বেড রেস্টে থাকার ফলে নড়াচড়াহীনতা অথবা দীর্ঘ সময়ধরে একটানা ভ্রমণ, গর্ভধারন এবং বৃদ্ধাবস্থা ইত্যাদি। কখনো কখনো আক্রান্ত স্থান ব্যাথা ছাড়াই ফুলে যেতে পারে। যদি দেখেন যে আপনার কাফের পেশি ফুলে গেছে সাথে ব্যাথা, তাহলে দেরী না করে ডাক্তারের শ্মরণাপন্ন হোন।
৬। পা এবং পায়ের পাতা জ্বালা-পোড়া
‘আমেরিকান ডায়াবেটিস এ্যাসোসিয়েশন’ এর এক হিসাবে দেখা গেছে যে, আমেরিকাতে প্রায় ২৭ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর এক-চতুর্থাংশ জানে না যে, তাদের ডায়াবেটিস আছে। “আর যারা জানে না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে রোগ লক্ষণ হল পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি” – ব্র্যাংম্যান বলেন। তার মতে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির লক্ষন হল পায়ে বা পায়ের পাতায় জ্বালা-পোড়া করা অথবা আলপিন বা সূচ ফোঁটার মত তীব্র ব্যাথা। আর এর মানে হল তার ডায়াবেটিসের কারনে প্রান্তিয় স্নায়ুগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়া।
৭। অস্পষ্ট, মেডিকেলি ব্যাখ্যা করা যায় না এমন ব্যাথা
সাইকিয়াট্রিস্ট থমাস ওয়াইস বলেন যে, মানসিক বিষাদে অনেক সময় নানাধরনের শারীরিক ব্যাথা অনুভূত হয়। অনেক রোগী এসে বলেন তার প্রচন্ড মাথা ধরেছে, তীব্র পেটে ব্যাথা হচ্ছে অথবা হাঁটুতে ব্যাথা পাচ্ছেন, কখনো কখনো একাধিক স্থানে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে ইত্যাদি। আসলে তিনি সঠিকভাবে বলতে পারছেন না কোথায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগীর নির্দেশিত স্থানে ব্যাথা না পাওয়াতে বা সঠিকভাবে ডায়াগনোজ না হওয়ার ফলে ডাক্তার হয়তো তার অভিযোগ বাতিল করে দিলেন। শুধু ডাক্তারই নয় রোগীর পরিবারের লোকজনও এতে তার অভিযোগ সম্পর্কে উদাসিন হয়ে পড়েন। এতে করে রোগী আরো ডিপ্রেসড হয়ে পড়ে এবং সেও তার রোগ সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে পড়ে। সব অভিযোগই ভন্ডুল হয়ে যায়।
শেষমেষ তারা ভাবেন আমার দ্বারা কিছু হবে না। এতে তাদের কাজে-কর্মে প্রচন্ড অনিহা চলে আসে, এমনকি কাজে-কর্মে অক্ষম হয়ে পড়ে, চিন্তা করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে। লোক সমাজে চলাচল পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। এরফলে তার স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ছেদ পড়ে, অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা না করালে তার মস্তিষ্কের কাঠামোগত পরিবর্তন দেখা দিতে পারে এবং আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে নাও আসতে পারে। সংগৃহীত...

Comments

Popular posts from this blog

Samsung has been fined around Rs 350 crore for allegedly selling products at exorbitant prices